এক জীবনের সব হাহাকার

এক জীবনের সব হাহাকার
বুকে নিয়ে
অভিশাপ তোমাকে দিলাম,
তুমি সুখী হবে, খুব সুখী হবে।
বেদনা আমাকে নিয়ে আশৈশব
খেলেছে তুমুল আর
তিলে তিলে শিখিয়েছে সহনশী
নিলাজ নখের মত দুঃখ
কেটে কেটে আমি
আজকাল অর্জন করেছি ঠিক
উদ্ভিদের অদ্ভুত
মৌনতা,
ওলো উল্লাসিনী
না জেনে শুনে কেনো দিতে গে
তুমি আর কী বেদনা দেবে,
কতোটা নাড়াবে?
বালখিল্য এই খেলায় আমার
চেয়েও
বেশী তুমিই হারাবে।
এক জীবনের সব হাহাকার
বুকে নিয়ে
অভিশাপ তোমাকে দিলাম,
তুমি সুখী হবে,
ব্রহ্মপুত্রের মেয়ে, দেখে নিও, খুব
সুখী হবে।

প্রস্থান

এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো৷
এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটা
খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো৷
ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত
ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো৷
কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে
কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে
পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো৷

আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো, আপত্তি নেই৷
গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?
আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?

এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে!

তুমি ডাক দিলে

একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থুল অনটন আজন্ম ভেতরে আমার |

তুমি ডাক দিলে
নষ্ট কষ্ট সব নিমেষেই ঝেড়ে মুছে
শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌছুবো
পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব
পথে এতোটুকু দেরিও করবো না

তুমি ডাক দিলে
সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরুদ্যান হবো,
তুমি রাজি হলে
যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো |

একবার আমন্ত্রণ পেলে
সব কিছু ফেলে
তোমার উদ্দেশ্যে দেব উজাড় উড়াল,
অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে
লোকালয়ে থাকবো না আর
আমরণ পাখি হয়ে যাব, – খাবো মৌনতা তোমার। ………..

হিরণবালা

হিরণবালা তোমার কাছে দারুন ঋণী সারা জীবন
যেমন ঋণী আব্বা এবং মায়ের কাছে।

ফুলের কাছে মৌমাছিরা
বায়ুর কাছে নদীর বুকে জলের খেলা যেমন ঋণী
খোদার কসম হিরণবালা
তোমার কাছে আমিও ঠিক তেমনি ঋণী।

তোমার বুকে বুক রেখেছি বলেই আমি পবিত্র আজ
তোমার জলে স্নান করেছি বলেই আমি বিশুদ্ধ আজ
যৌবনে এই তৃষ্ণা কাতর লকলকে জিভ
এক নিশীথে কুসুম গরম তোমার মুখে
কিছু সময় ছিলো বলেই সভ্য হলো
মোহান্ধ মন এবং জীবন মুক্তি পেলো।

আঙুল দিয়ে তোমার আঙুল ছুঁয়েছিলাম বলেই আমার
আঙুলে আজ সুর এসেছে,
নারী-খেলার অভিজ্ঞতার প্রথম এবং পবিত্র ঋণ
তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখে সত্যি কি আর শোধ হয়েছে?

প্রেমের প্রতিমা তুমি

প্রেমের প্রতিমা তুমি, প্রণয়ের তীর্থ আমার।

বেদনার করুণ কৈশোর থেকে তোমাকে সাজাবো বলে
ভেঙেছি নিজেকে কী যে তুমুল উল্লাসে অবিরাম
তুমি তার কিছু কি দেখেছো?

একদিন এই পথে নির্লোভ ভ্রমণে
মৌলিক নির্মাণ চেয়ে কী ব্যাকুল স্থপতি ছিলাম,
কেন কালিমা না ছুঁয়ে শুধু তোমাকেই ছুঁলাম
ওসবের কতোটা জেনেছো?

শুনেছি সুখেই বেশ আছো, কিছু ভাঙচুর আর
তোলপাড় নিয়ে আজ আমিও সচ্ছল, টলমল
অনেক কষ্টের দামে জীবন গিয়েছে জেনে
মূলতই ভালোবাসা মিলনে মলিন হয়, বিরহে উজ্জ্বল।

এ আমার মোহ বলো, খেলা বলো
অবৈধ মুদ্রার মতো অচল আকাঙ্ক্ষা কিংবা
যা খুশী তা বলো,
সে আমার সোনালি গৌরব
নারী, সে আমার অনুপম প্রেম।

তুমি জানো, পাড়া-প্রতিবেশী জানে পাইনি তোমাকে,
অথচ রয়েছো তুমি এই কবি সন্নাসীর ভোগে আর ত্যাগে।

যাতায়াত

কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।
কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না
রাত কাটে তো ভোর দেখি না,
কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না; কেউ
জানেনা।

নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম
পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পথিক
দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও,
কেই বলেনি ভালো থেকো সুখেই থেকো।
যুগল চোখে জলের ভাষায় আসার সময় কেউ বলেনি
মাথার কসম আবার এসো।

জন্মাবধি ভেতরে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো
শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক,
চৈত্রাগুনে জ্বলে গেলো আমার বুকের গেরস্থালি
বললো না কেউ তরুন তাপস এই নে চারু শীতল কলস।

লন্ডভন্ড হয়ে গেলাম তবু এলাম।
ক্যাঙ্গারু তার শাবক নিয়ে যেমন করে বিপদ পেরোয়
আমিও ঠিক তেমনি করে সভ্যতা আর
শুভ্রতাকে বুকে নিয়েই দুঃসময়ে এতোটা পথ
একলা এলাম শুশ্রূষাহীন।
কেউ ডাকেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালোবাসি।

দুঃখের আরেক নাম

আমাকে স্পর্শ করো, নিবিড় স্পর্শ করো নারী।
অলৌকিক কিছু নয়,
নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক তুমি
তোমার স্পর্শেই শুধু আমার উদ্ধার।
আমাকে উদ্ধার করো পাপ থেকে,
পঙ্কিলতা থেকে, নিশ্চিত পতন থেকে।
নারী তুমি আমার ভিতরে হও প্রবাহিত দুর্বিনীত নদীর
মতন,
মিলেমিশে একাকার হয়ে এসো বাঁচি
নিদারুণ দুঃসময়ে বড়ো বেশি অসহায় একা পড়ে আছি।
তুমুল ফাল্গুন যায়, ডাকে না কোকিল কোনো ডালে,
আকস্মিক দু’একটা কুহু কুহু আর্তনাদ
পৃথিবীকে উপহাস করে।
একদিন কোকিলেরো সুসময় ছিলো, আজ তারা
আমার মতোই বেশ দুঃসময়ে আছে
পাখিদের নীলাকাশ বিষাক্ত হয়ে গেছে সভ্যতার অশ্লীল
বাতাসে।
এখন তুমিই বলো নারী
তোমার উদ্যান ছাড়া আমি আর কোথায় দাঁড়াবো।
আমাকে দাঁড়াতে দাও বিশুদ্ধ পরিপূর্ণতায়,
ব্যাকুল শুশ্রুষা দিয়ে আমাকে উদ্ধার করো
নারী তুমি শৈল্পিক তাবিজ,
এতোদিন নারী ও রমনীহীন ছিলাম বলেই ছিলো
দুঃখের আরেক নাম হেলাল হাফিজ।